‘যুবলীগ নেতার ভতিজির সাথে প্রেম করে বাড়ি ছাড়া ৫ পরিবার’

‘যুবলীগ নেতার ভতিজির সাথে প্রেম করে বাড়ি ছাড়া ৫ পরিবার’

ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
একটি প্রেমের ঘটনার সুত্র ধরে দেড় বছর থেকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের বেলতৈল গ্রামের ৫টি পরিবারের ২৩ জন সদস্য বাড়িছাড়া হয়েছেন। প্রতিপক্ষের লোকজনের জীবননাশের ভয়ভীতির কারণে তারা বাড়িতে বসবাস করতে পারছেন না। বিষয়টি আপোষ মীমাংসার জন্য বাড়িছাড়া এসব পরিবারের লোকজন প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও সমাধান পায়নি।

ঘটনাটি সরেজমিনে অনুসন্ধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল হক (বি সার্কেল) স্বাক্ষরিত গত বছরের ২০ জুলাই গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কাছে দাখিল করা একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেলতৈল গ্রামের আজিজার রহমান মন্ডলের ছেলে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে প্রতিবেশি সাঘাটা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ হিরুর তৎকালীন ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া (১৩) ভাতিজির সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই প্রেক্ষিতে গত ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারা দুজনে সকলের অজান্তে অন্যত্র চলে যায়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই সম্রাট আওরঙ্গজেব, ভগ্নিপতি আইনজীবী আবু হায়াত মো. সামছুজ্জোহা মন্ডল সেকুল, চাচা হবিবর রহমান মন্ডল, বড় জেঠা জহির উদ্দিন মন্ডল, জেঠাতো ভাই মশিউর রহমান মন্ডল মুকুলের বাড়ি ও কক্ষের আসবাবপত্র ভাংচুর করে অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় হারুনুর রশিদ হিরুসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

পরে ২৩ সেপ্টেম্বর সম্রাট আওরঙ্গজেব, বড় ভাই প্রিন্স মাহমুদ, ভগ্নিপতি সামছুজ্জোহা মন্ডল সেকুল, জেঠাতো ভাই মামুন মিয়া ও বড় বোন বিলকিস বেগমকে আসামী করে সাঘাটা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন হারুনুর রশিদ হিরু। তদন্ত শেষে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ দোষ না থাকায় অন্যান্য আসামীদের অব্যাহতি দিয়ে শুধু সম্রাট আওরঙ্গজেবকে আসামী করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল হক আরো উল্লেখ করেন, হারুনুর রশিদ হিরু ক্ষিপ্ত হয়ে  সম্রাট আওরঙ্গজেবের পরিবারসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের খুনের হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে বাড়িছাড়া করেছেন। ফলে তারা জীবনের ভয়ে অন্যত্র বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস করছে।

ওই মেয়েটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাড়িতে স্বেচ্ছায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে হারুনুর রশিদ হিরু বলেন, এই ঘটনার পর আমরা সম্রাটর পরিবারের লোকজন ও গ্রামের গন্যমান্য লোকদের সাথে একটি বৈঠকে বসি। বৈঠকে সম্রাট খুব দ্রুত অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে আবার সম্রাট আমার ভাতিজিকে নিয়ে পালিয়ে যায় এবং ১০-১২ দিন পর বাড়ি ফিরে আসে।

বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কারো বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করিনি। আমাদের হয়রানি করার জন্য তারা নিজেরাই ইচ্ছে করে বাড়িতে থাকেন না। এ ছাড়া সম্রাট আওরঙ্গজেব মেয়েটিকে উত্যক্ত করতো বলেও জানান হারুনুর রশিদ হিরু।

সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উচ্ছেদ হওয়া ওইসব পরিবারের সদস্যরা যেদিন চাইবে সেদিন আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বাড়ীতে তুলে দেব। তারা কোনদিন বাড়ীতে উঠতে চায় সেটা আমাকে জানালে আমি ফোর্সসহ নিজে উপস্থিত থাকবো।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment